বাবা মারা যান অল্প বয়সে। কায়ক্লেশে চলা পরিবারের ভার বহন করার জন্যে অল্পবয়সেই কাজ করা শুরু করেন বাইরে। পাশাপাশি তিনি লালন করতে থাকেন অভিনয়ের নেশাও...

যেকোনো বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে প্রোটাগনিস্ট চরিত্রগুলোর অসাধারণ অভিনয়ের পাশাপাশি দুয়েকজন সাপোর্টিং কাস্টও এতটা দুর্দান্ত অভিনয় করে, মানুষ নির্মান ভুলে গেলেও সেই বিশেষ চরিত্রের স্মৃতি থাকে অম্লান। সেরকমই এক চরিত্র, 'দ্য ফ্যামিলি ম্যান' এর 'সাজিদ।' দয়ামায়াহীন দুর্ধর্ষ টেরোরিস্ট তিনি, সিরিজের বিভিন্ন ক্রাইসিসে যিনি মুহুর্মুহু ত্রাসসৃষ্টি করেছেন। মানুষকে আতঙ্কিত করেছেন। ক্রমশ পরিপক্ক অভিনয়ে নিজের চরিত্রের প্রয়োজন মিটিয়ে জয় করে নিয়েছেন আপামর দর্শকের হৃদয়। অজ্ঞাতকুলশীল থেকে রূপান্তরিত হয়েছেন উপমহাদেশের বহুল জনপ্রিয় এক মানুষে। অথচ এই মানুষটির শুরুর গল্পটা অনেকটাই অন্যরকম। 

দিল্লির মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা শাহাব আলি অথবা 'দ্য ফ্যামিলি ম্যান' এর 'সাজিদ' এর। অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে। এর উপরে বাবাও মারা গিয়েছিলেন খুব অল্পবয়সে। খুব অল্পবয়সেই রূঢ় পৃথিবী বুঝিয়ে দেয় শাহাবকে, মধ্যবিত্তের 'স্বপ্ন' বলে কিছু থাকতে নেই৷ অগত্যা, অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নকে লুকিয়ে রাখতে হয় বহুদিন। কোনোরকমে স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর পর শাহাব শুরু করেন ছোটোখাটো কাজ৷ দোকানও করেন কিছুদিন। যখন যেখানে যা কাজ পেয়েছেন, করেছেন। টাকা উপার্জন করেছেন। উপার্জিত টাকায় পরিবারকে টেনেছেন। পাশাপাশি নিজের জন্যে কিছু টাকাপয়সাও জমিয়েছেন। 

কলেজে পড়াশোনা করা অবস্থায় থিয়েটারে ঢুকেছিলেন। টুকটাক কাজ, কলেজ, থিয়েটার এভাবেই চলছিলো সবকিছু। কলেজের পাট চুকানোর পরে তিনি ভর্তি হয়ে যান দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে পড়াশোনা করা অবস্থাতেই মাথায় আবার ফিরে আসে নাটকের নেশা। নাটকের দলের সাথে ঝুঁকে যান। পথনাটিকা করেন কিছু। এসবের পাশাপাশি মাথায় সেই চিন্তা বরাবরই ছিলো, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি। শুধু নাটক করে পেট চলবে না। একটা চাকরী করতে হবে। তিনি তাই অভিনয়ের সাথে সম্পর্কিত কোনো চাকরী আছে কী না, তার খোঁজ করতে শুরু করেন। সংবাদপত্রে একটা চাকরী পেয়েও যান। কিন্তু সেই চাকরী কিছুদিন করার পরে বুঝলেন, খুব একটা ভালো লাগেছেনা না তার। বুঝলেন, এভাবে হবে না। 

পর্দার 'সাজিদ' বরাবরই দুর্ধর্ষ!  

এরপরই করলেন একটা পাগলামি। সব ছেড়েছুড়ে  ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় ভর্তি হয়ে গেলেন। সে সাথে কিছু ব্রডওয়ে মিউজিক্যালে অভিনয়ও করা শুরু করলেন। এসব কাজ থেকে যা টাকাপয়সা আসতো, তা দিয়েই সংসার চলতো শাহাব এর। নজর রাখছিলেন বলিউডের দিকেও। একটা সুযোগের জন্যে। ভালো কোনো প্রজেক্টে অভিনয়ের জন্যে। বলিউডের এক কাস্টিং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ ছিলো তার। তারাই একদিন শাহাব আলিকে জানায়, 'দ্য ফ্যামিলি ম্যান' এর জন্যে অডিশন হচ্ছে। শাহাব আসেন অডিশন দিতে। নির্বাচিত হন 'সাজিদ' চরিত্রের জন্যে। যখন জানতে পারেন, মনোজ বাজপেয়ী'র সাথে অভিনয় করবেন, আনন্দে কেঁদে ফেলেন! 

মনোজ বাজপেয়ী শুটিং এ সহ-অভিনেতাদের বরাবরই সাহায্য করেন, টিপস দেন। শাহাবকেও অভিনয় নিয়ে বিস্তর টিপস দিয়েছেন। অভিনয়ের খুঁত পেলে তা ধরিয়ে দিয়েছেন। ভালো অভিনয়ের জন্যে প্রশংসাও করেছেন। অভিনয়ের অনেক গলিঘুঁজি মনোজ বাজপেয়ীর থেকে রপ্ত করেছে শাহাব আলী। ফলশ্রুতিতে অভিনয়টাও বেশ খোলতাই হয়েছে এই সিরিজে। 

মনোজ বাজপেয়ীর কাছ থেকে শিখেছেন অভিনয়ের নানা খুঁটিনাটি!  

কিন্তু 'দ্য ফ্যামিলি ম্যান' এ দুর্দান্ত অভিনয়ের পরেও শাহাবের অর্থকষ্ট দূর হয়নি মোটেও। এরপর‍ যখনই যে কাজে ডাক পেয়েছেন, সেখানে তাকে 'টেরোরিস্ট' এর রোলই দেয়া হয়েছে অধিকাংশ সময়ে। একটা সময়ে 'টেরোরিস্ট' রোলের জন্যে ডাকাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শাহাব আলী পড়েছেন বিপাকে! তবে এরমধ্যেও কুড়িয়ে বাড়িয়ে এগোচ্ছেন এই অভিনেতা। আশা করেন, অচলাবস্থা কাটবে শিগগিরই। 

জীবনে এখনও অনেকটা দূরত্ব অতিক্রম করা বাকি তার। হোঁচট খেতে খেতে যে পথচলা, সেখানে বহু প্রতিবন্ধকতা এলেও এখনো হার মানেননি তিনি। নিজের মত করেই এগোচ্ছেন সামনে। দর্শকের ভালোবাসা আর অদম্য মনোবলে যেভাবে তিনি ক্রমশ যাপিত সব সংকট উপেক্ষা করছেন, সামনের দিনেও তা অক্ষুণ্ণ থাকুক।  প্রতিভাবান এই অভিনেতার সাফল্য ক্রমশই অতিক্রম করুক সব গণ্ডি। এটাই প্রত্যাশা। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা