নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ- প্রায় সব মাধ্যমেই শ্যামল মাওলা একাধিকবার কাজ করেছেন। তবে এবারের কেসটা একটু ভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে নির্মিত একটি সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি...

বাংলা সিনেমায় ছোট পর্দার অভিনেতা প্রবেশ করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের আনকোরা সক্ষমতা প্রকাশ পায়। তাছাড়া ছোট পর্দার সাথে রূপালী পর্দার বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য বেশিরভাগ সময়ই অভিনেতারা ধারণ করতে পারেন না। তখন সাধারণ দর্শকের কাছে সিনেমার সবকিছু ভালো লাগলেও 'কী একটা যেন নেই' মনে হয়। 

তবে এর বাইরেও কিছু মানুষ থাকেন। যাদের নাটকের প্রয়োজনে কিংবা সিনেমার প্রয়োজনে বারবার রূপ বদলাতে হয়। সেই রূপে যতটা না থাকে চরিত্রের প্রয়োজন, তারচেয়ে বেশি থাকে চরিত্র হয়ে ওঠার সক্ষমতা। শ্যামল মাওলার প্রাসঙ্গিকতা এখানেই উঠে আসে। 

নাটক, সিনেমা কিন্তু ওয়েব সিরিজ- প্রায় সব মাধ্যমেই শ্যামল মাওলা একাধিকবার কাজ করেছেন। নিয়মিতই কাজ করছেন বলা চলে। তবে এবারের কেসটা একটু ভিন্ন। একই সাথে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল ইতিহাসকে ঘিরে তৈরি হওয়া ঘটনাকে কেন্দ্রবিন্দু করে নির্মিত একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। সিনেমার সাধারণ চরিত্রের খাতিরে এমনিতেও তার সক্ষমতা  দেখানোর দরকার ছিলো। সাথে সাথে মনোস্তাত্বিক পোর্টফোলিওতে যুক্ত হতো হয়তো ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক প্রভাব। তবে এখানে  কেন্দ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্যামল মাওলা। যেটা পুরো ব্যাপারটাকেই বদলে দিয়েছে।

গত বছরের শেষের দিকে নির্মাতা তৌকির আহমেদ ঘোষণা করেন ‘স্ফুলিঙ্গ’ নামের নতুন সিনেমাটির। সেখানে কী হতে চলেছে তা বিষয়ে তেমন কারো ধারণা ছিলো না। তবে এটা বলা হয়েছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শত তম জন্মদিন উপলক্ষে তৈরি করা হচ্ছে এই বিশেষ সিনেমাটি। কিন্তু মাত্র ২৩ দিনের মধ্যে শ্যুটিং শেষ হয়ে এটি এখন মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই সিনেমাটির প্রি-প্রোডাকশন অংশকে প্রশংসা করতে হয়। তা নাহলে বাংলাদেশের প্রচলিত প্রেক্ষাপটে এত দ্রুত সিনেমা তৈরি করাটা একটু কঠিনই বটে। 

শুধু তাই নয়, সিনেমাটির ডাবিং শেষে ইতোমধ্যে মুক্তির তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। তৌকির আহমেদের কাজ যারা দেখছেন তারা জানেন, তিনি অন্তত কাস্টিং নিয়ে সন্তুষ্ট না হলে শ্যুট শেষ করার কথা না। তাহলে বলাই যায়, আবুল হায়াত, মম কিংবা পরিমনীর বাইরে শ্যামল মাওলা তার সক্ষমতা দেখাতে পেরেছেন। কিন্তু শ্যামল মাওলার বিভিন্ন কাজ দেখে বোঝা যায়, চরিত্রের খাতিরে শ্যামল মাওলার কাজের বৈচিত্র্যতা দেখা গেলেও প্রায় প্রত্যেকটি কাজে তার নিজস্বতা বিদ্যমান। 

স্ফুলিঙ্গ সিনেমার একটি দৃশ্যে শ্যামল মাওলা

কিছুদিন আগে যখন আমি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইতে ‘মানি হানি’ নামের ওয়েব সিরিজটা দেখছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো শ্যামল মাওলা চাইলে তার অভিনয়ের সক্ষমতা দেখাতে পারেন অন্য চরিত্রেও। স্ফুলিঙ্গ সিনেমার ট্রেইলার বের হয়েছে শুধু। তাতে অন্তত এটা পরিস্কার শ্যামল মাওলা একদমই ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টায় আসি। 

স্ফুলিঙ্গ সিনেমাটির গল্প আবর্তিত হয়েছে একটি ব্যান্ড দলকে কেন্দ্র করে। সেই ব্যান্ডের ভোকাল শ্যামল। কিন্তু ট্রেলার দেখে বোঝা যায়, গল্পটি সম্ভবত সরল রৈখিক ভাবে এগিয়ে নেয়া হয়নি। এই যে দ্বিমুখী গল্প সিনেমাতে দেখানো, এটা কিন্তু পরিচালক কিংবা অভিনেতা উভয় পক্ষের জন্যই বেশ সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের। শ্যামল মাওলা কি এই চ্যালেঞ্জের দুয়ারে দাঁড়িয়ে তার নিজস্বতা দেখাতে পেরেছেন? প্রশ্নটা তোলা রইলো। 

সমস্যা হলো স্ফুলিঙ্গ সিনেমায় যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অন্তত ট্রেইলারে শ্যামল মাওলার মত অন্য কেউ সেভাবে নজর কাড়তে পারেননি। নির্মাতা তৌকিরের সিগনেচার এক্টর আবুল হায়াতকে একপাশে রাখলে ট্রেইলারের দুই মিনিট বিশ সেকেন্ড চোখে আটকে গেছেন শ্যামল মাওলা। তার আগের অভিনীত ‘গেরিলা’ কিংবা ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ সিনেমাগুলোর মত শ্যামল মাওলা তার নিজস্বতা কি স্ফুলিঙ্গতে বজায় রাখবে? আমার মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ ঘরানার সিনেমা হিসেবে তরুন অভিনেতাদের দিয়ে তৈরি বিশেষ করে শ্যামল মাওলার মত অভিনেতাকে সঙ্গে করে নির্মিত ‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমায় অন্যরকম এক শ্যামল মাওলাকে দেখতে পাওয়া যাবে। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা