শেরশাহ: সিদ্ধার্থের ক্যারিয়ার ডিফাইনিং রোল!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

শেরশাহ এতটা ভালো হবে আশা করিনি। খুবই ওয়েল মেইড ফিল্ম। স্ক্রিনপ্লে খুবই ক্যাপ্টিভেটিং, বোরিং লাগার সুযোগ নেই বললেই চলে। যুদ্ধের অংশেও শেরশাহ বেশ কিছু নতুনত্ব এনেছে। আর্মির স্ট্র্যাটেজি, ব্যাটেলিয়ন অপারেশন আর যুদ্ধের পার্থক্য সবকিছু বেশ ভালোভাবে দেখিয়েছে। যুদ্ধ দেখিয়েছেও খুবই দারুণভাবে, সিনেম্যাটোগ্রাফি দুর্দান্ত...
নব্বইয়ের শেষেরদিকে পেপসির এডভার্টাইজিং স্লোগান Yeh dil maange more অনেক পপুলার হয়ে গিয়েছিল। এতোই পপুলার যে বেশ কয়েক বছর সেটা নিয়ে পেপসি ক্রমাগত ক্যাম্পেইন করেই গেছে বড় বড় স্টারদের নিয়ে। বাংলাদেশেও এর হাওয়া লেগেছিল।
এই কপিটাই কীনা ১৯৯৯ সালে ভারত-পাকিস্তান কারগিল ওয়ারে বিক্রম বাত্রার স্লোগান হয়ে গেল। বিক্রম যেন নিজের ভেতরকার ইচ্ছেটাকেই এই কথার মাধ্যমে প্রকাশ করতে চাচ্ছিল। কারণ, সে থামতে চায় নি, ক্ষ্যাপাটে বিক্রম চেয়েছিল যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করে যেতে, চেয়েছিল আরও কয়টা শত্রুকে মেরে মরতে।
ওয়ার ফিল্ম আমরা প্রচুর দেখেছি। ভারতীয় ওয়ার ফিল্মের প্রতি অনেকেরই বিতৃষ্ণা, বারবার একই কাহিনী ভারত-পাকিস্তান। ভারত ভালো, পাকিস্তান খারাপ এসব দেখায়। তো ভারতের যুদ্ধের সিনেমায় কী দেখাবে আর? যাদের সাথে যুদ্ধ হয়েছে তাদেরই তো দেখাবে এবং জেনেরিকই দেখাবে। আর কোন উপায়ই নেই, ওই পক্ষের পার্স্পেক্টিভ তো এই পক্ষ দেখাবে না। কেউই দেখাবে না। হলিউডের সিনেমাতে এভেঞ্জারস যেমন নিউইয়র্কই রক্ষা করবে তেমনি কাশ্মীর যুদ্ধ দেখাতে চাইলে ভারত-ভুটান যুদ্ধ তো দেখানো যাবে না।

আরেকটা অভিযোগ জিংগোইজম প্রিচ করা হয় এসব ফিল্মে। আর্মিরা নিজের জান হাতে নিয়ে যুদ্ধ করতে যায় যেখানে মারো নাহয় মরো, সেখানে এগ্রেসিভ দেশভক্তি না দেখালে, আর কীভাবে মোটিভেট করা সম্ভব! যুদ্ধ নয় শান্তি চাই স্লোগান আজকের না, শত শত বছর ধরে বুদ্ধিজীবীরা বলে আসছে। সাধারণ মানুষ মাত্রও সেটাই চায়। কিন্তু যখনই আপনি সীমান্তরেখা এঁকে দিয়েছেন পৃথিবীর মাঝে, তখন থেকে চাইলেও আর যুদ্ধ থেকে পরিত্রাণ নেই।
যাই হোক, শেরশাহে ফিরি। শেরশাহ বিক্রম বাত্রার কোডনেম। বিক্রম যুদ্ধের ময়দানে পাগলাটে, ক্ষ্যাপা এক আর্মি অফিসার আর নিজ শহরে ফিল্মি এক প্রেমিক, বন্ধু, মা-বাবার সবচেয়ে দুষ্টু সন্তান। শেরশাহ মূলত বিক্রমের এই দুই জীবনের গল্পই বলে। শেরশাহ'র স্ক্রিনপ্লে খুবই ক্যাপ্টিভেটিং, বোরিং লাগার সুযোগ নেই বললেই চলে। বারবার গল্প আগে-পিছে করেছেন যেন দুটোই পাশাপাশি চলতে থাকে। কখনো যুদ্ধ, কখনও প্রেম। যুদ্ধের সিনেমা বলে শুধু যুদ্ধই চলতে থাকেনি, বিক্রম আর ডিম্পলের মিষ্টি মধুর প্রেমও এসেছে।
বলিউডের যুদ্ধভিত্তিক সিনেমায় প্রেম, পরিবার খুব কমই সফলভাবে পর্দায় এসেছে, বিক্রম বাত্রা সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। এখানে বিক্রমের ব্যক্তিগত জীবন একটু বিশদভাবে আসাটা অনেক দরকার ছিল বিক্রমের প্রতি মায়া জন্মানোর জন্য দর্শকের মনে, সেটা জন্মেছেও। যুদ্ধের অংশেও শেরশাহ বেশ কিছু নতুনত্ব এনেছে। আর্মির স্ট্র্যাটেজি, ব্যাটেলিয়ন অপারেশন আর যুদ্ধের পার্থক্য সবকিছু বেশ ভালোভাবে দেখিয়েছে। যুদ্ধ দেখিয়েছেও খুবই দারুণভাবে, সিনেম্যাটোগ্রাফি দুর্দান্ত। একশন সিনগুলো একটুও ক্লামজি লাগবে না।

শেরশাহ এতটা ভালো হবে আশা করি নি। খুবই ওয়েল মেইড ফিল্ম। সিদ্ধার্থ অবশ্যই তার ক্যারিয়ার ডিফাইনিং রোল করেছে, অনেকটা সুশান্তের মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো। সিদ্ধার্থ প্রায় ছয় বছর এই সিনেমার গল্পটাকে সাথে নিয়ে ছিল, চেয়েছিল বিক্রম বাত্রার গল্পটাকে সিনেমাতে রূপ দিতে। প্রোডিউসার না পাওয়া সত্ত্বেও বারবার বিক্রমের পরিবারের সাথে আলাপ করেছে, জেনেছে বিক্রমকে আরও গভীরভাবে। তাই হয়তো এই ক্যারেক্টারের সাথে মিশে যেতে পেরেছে সে।
এই সিনেমার দুর্ভাগ্য যে বক্স অফিস থাকবেনা তার। যদি সিনেমা হলে রিলিজ দেয়া যেত, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতো নিঃসন্দেহে সুপারহিট-ব্লকবাস্টার হতো। অবশ্যই এর প্রধান কারণ বিক্রম বাত্রা। বিক্রমকে শুধু ভারতের না প্রতিটা মানুষেরই চেনা দরকার। এরকম পাগলাটে, ক্ষ্যাপা, সাহসীরাই আসলে যুদ্ধ জয় করতে জানে, দেশকে ভেতর থেকে ভালোবাসতে জানে।
আমাদের দেশেরও এরকম পাগলাটে, ক্ষ্যাপা তরুণ অনেক ছিল, যারা স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। এরকম পাগলাটে, ক্ষ্যাপা তরুণ অনেক আছে যারা সামরিক বাহিনীর হয়ে আমাদের অজান্তেই অনেক বীরত্বের কাজ করেছে, আত্মত্যাগ করেছে; সে গল্পগুলো যতদিন না আমরা সামনে নিয়ে আসতে পারবো ততোদিন আমরা নিজেরাই নিজেদের মূল্যায়ন করতে পারবো না। দেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারবো না। আর কতো দেরি হলে সে গল্পগুলো জানা হবে, জানানো হবে! কে জানে!