শমী কায়সার: অভিনয়ের দ্যুতিতে যিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল করেছিলেন নিজেকে
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

'নক্ষত্রের রাত' নাটকে মনীষা হয়ে তিনি দর্শকের চোখে জল এনে দিয়েছেন, তার জাদুকরী অভিনয়ের ঝলক দেখা গেছে টিভি নাটকে, সিনেমাতেও। ব্যক্তিগত জীবনে ছন্দপতন না ঘটলে, পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার না হলে শমী কায়সার নিজেকে কোথায় নিয়ে যেতে পারতেন...
১৯৯৫ সাল, বিটিভির জন্য হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করলেন প্রথম ধারাবাহিক নাটক 'নক্ষত্রের রাত'। এর আগে উনার লিখায় বেশ সংখ্যক ধারাবাহিক নাটক সাড়া ফেলেছে, তবে নির্মাণে প্রথম। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কাহিনী, সুখ-দুঃখ, জীবনের নানা অধ্যায়, নতুন উপলব্ধির এই নাটক দর্শকদের ভীষন পছন্দের, এখন জনপ্রিয়তা বেড়েছে আরো বহুগুণ। প্রতিটি চরিত্রই যেন দর্শকদের আপন, তবে সবার মধ্যমনি 'মনিষা', পুরো ধারাবাহিকের সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র এটি। মনিষা চরিত্রটির জন্য নক্ষত্রের রাত অবশ্যই বিশেষ হয়ে থাকবে।
মনিষার মতো চরিত্রকে ধারণ করতে অবশ্যই একজন প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীর প্রয়োজন। হুমায়ূন আহমেদ ঠিকই জহুরীর চোখের মতো বেছে নিলেন তৎকালীন অন্যতম সেরা জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী। জনপ্রিয়তায় তিনি যেমন অনেক এগিয়ে, তেমন অভিনয়েও তিনি সবার থেকে এগিয়ে। তাঁর তখন ব্যস্ত সময়, একের পর এক নাটক করছেন। এত ব্যস্ততার মাঝেও 'মনিষা' চরিত্রকে নিজের মধ্যে ধারণ করে নিয়েছিলেন, এতটাই দারুণ অভিনয় করেছিলেন যে, দর্শকরা আজও দেখলে অশ্রুসজল হয়। তিনি বাংলা টেলিভিশন জগতের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী 'শমী কায়সার'।
ইমদাদুল হক মিলনের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত 'যত দূরে যাই' ক্যারিয়ারের প্রথম আলোচিত নাটক। কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল মায়াময়ী চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের প্রিয় হয়ে উঠেন। এই নাটকেই তিনি অভিনয় প্রতিভা দিয়ে বুঝিয়েছিলেন, অভিনয় দিয়ে তিনি দর্শকদের মন জয় করতে এসেছিলেন। অরুণ চৌধুরীর 'নয়ন' নাটকের নাম নিলে সালমান শাহ'র নাম সর্বাগ্রে আসে, তবে এই নাটকে অন্ধ মেয়ের চরিত্রে যে অতুলনীয় অভিনয় করেছিলেন শমী কায়সার, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। অরুণ চৌধুরীর আরো দুটি নাটকের কথা বলতেই হয়, প্রথম নাটক 'স্পর্শ' ও ধারাবাহিক নাটক 'ছোট ছোট ঢেউ'। দুইটি নাটকেই অভিনয় করেছিলেন ক্যারিয়ারে যার সঙ্গে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল সেই বিপাশা হায়াতের সঙ্গে, দুইটিতেই তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বেশ কয়েক বছর পর, চয়নিকা চৌধুরীর 'তোমাকে ছুঁয়ে' তে আবার একসাথে অভিনয় করেছিলেন, এই নাটকে প্রশংসায় শমী কায়সারই এগিয়ে ছিলেন।
'নক্ষত্রের রাত' এ মনিষা চরিত্রে শমী কায়সারের অভিনয় আজ তো ইতিহাস। এছাড়া কোন কাননের ফুল, অন্ধ শিকারী, স্বপ্ন, আরিয়ানা, নীলাঞ্জনা, স্বরবর্ণ থিয়েটার, কুসুম কুসুম ভালোবাসা, পুত্রদায়, ছায়া বৃক্ষ সহ অনেক নাটকই ক্যারিয়ারে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। 'ধানসিঁড়ি' নামক প্রযোজক সংস্থা ছিল, বেশকিছু নাটক বানিয়েছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সার ও পান্না কায়সারের প্রথম সন্তান তিনি। স্বনামখ্যাত নির্দেশক আতিকুল হক চৌধুরীর 'কেবা আপন কেবা কর' দিয়ে বিটিভির নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। মঞ্চেও রয়েছে সফল কাজ, সেলিম আল দীনের 'যৈবতী কন্যার মন' তো বিখ্যাত হয়ে আছে। সৌন্দর্য, অভিনয় প্রতিভার জন্য চলচ্চিত্রের অফার পেতেন খুব, কিন্তু ফিরিয়ে দিতেন। এমনকি বন্ধু সালমান শাহ তাকে যুগান্তকারী হিট ছবি 'সত্যের মৃত্যু নেই' তে অভিনয় করার অফার দিয়েছিলেন কিন্তু করেননি, কাজ করেননি 'শ্রাবণ মেঘের দিন' এর মতো সিনেমাতেও।
পরবর্তীতে ঋত্বিক ঘটকের নায়িকাদের নিয়ে ইংরেজি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন, দুই বিখ্যাত সাধক লালন ও হাছন রাজার জীবনীতে অভিনয় করেছিলেন, বিহঙ্গ নামে একটা সিনেমাও করেছেন। তবে কোনোগুলোতেই শমী কায়সারের সঠিক ব্যবহার হয়নি। বছর দুয়েক আগে 'যুদ্ধশিশু' নামে একটা সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হলেও আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করছেন, নিজের বাবা- মায়ের জীবন কাহিনী নিয়ে আব্দুল্লাহ আল সাদের নির্মাণে ছবি বানাচ্ছেন।
শমী কায়সার আমাদের টিভি অঙ্গনের জনপ্রিয়দের একজন, তবে নিজেকে আরো অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু পারেননি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে, যার কারণে সুন্দর সমাপ্তি ঘটেনি। এছাড়া ব্যক্তিগত জীবনের ছন্দপতন ও অনেকটা দায়ী। গত কয়েক বছরে কিছু নাটকে অভিনয় করেছেন বটে, তবে ক্যারিয়ারের ভিন্নমাত্রা যোগ করেনি।
১৯৬৯ সালের আজকের এইদিনে জন্মগ্রহণ করা এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজ পেরোচ্ছেন ৫২ বছর, শুভকামনা রইলো। মিডিয়াভুবনে নিজেকে আরো রঙিন করে তুলুক, ব্যক্তিজীবনেও থাকুক পরিচ্ছন্ন। শুভ জন্মদিন, শমী কায়সার।