রিমেক' নিয়ে বলিউডের মাতামাতি কমছে না মোটেও। তেলেগু 'অর্জুন রেড্ডি' থেকে রিমেক হয়ে 'কবির সিং' হয়েছে। আরেক তেলেগু 'জার্সি' থেকে রিমেক হয়ে বলিউডি 'জার্সি' মুক্তির অপেক্ষায়। আল্লু অর্জুনের 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু' থেকে নির্মিত হচ্ছে 'শেহজাদা।' তবুও আফসোস থাকতো না, যদি রিমেকগুলো মনে রাখার মতো হতো। কমার্শিয়াল নানা ক্লিশে জিনিসপাতি যুক্ত করে যেভাবে মূল গল্পগুলোকে রিমেকের কুলোপানা চক্করে জেরবার করা হচ্ছে নিয়মিত, তাতে হতাশাই জোরদার হচ্ছে নিয়মিত!

বলিউডের পালাবদল দেখলে বিস্তর অবাক হতে হয় এখন। যে ইন্ডাস্ট্রি এতকাল ধরে এতসব কালজয়ী সিনেমা বানিয়েছে, সেই ইন্টাস্ট্রির সাম্প্রতিক রুগ্নদশা দেখলে যারপরনাই ক্লান্তিবোধও আসে। ভালো গল্পে বলিউডি সিনেমার আশা তো ছেড়েই দিয়েছি, তাদের এখন 'খারাপ' গল্পও নেই। একের পর এক রিমেকে নিজেদের মরাগাঙকে চাঙা রাখার যে চেষ্টা তাদের, সেটাও যে সবসময় বেশ ফলপ্রসূ হচ্ছে, সেটিও বলা যায়না। তবে তাই বলে 'রিমেক' নিয়ে তাদের মাতামাতি কমছে না মোটেও। তেলেগু 'অর্জুন রেড্ডি' থেকে রিমেক হয়ে 'কবির সিং' হয়েছে। আরেক তেলেগু 'জার্সি' থেকে রিমেক হয়ে বলিউডি 'জার্সি' মুক্তির অপেক্ষায়। আল্লু অর্জুনের 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু' থেকে নির্মিত হচ্ছে 'শেহজাদা।' তবুও আফসোস থাকতো না, যদি রিমেকগুলো মনে রাখার মতন হতো। কমার্শিয়াল নানা ক্লিশে জিনিসপাতি যুক্ত করে যেভাবে মূল গল্পগুলোকে রিমেকের কুলোপানা চক্করে জেরবার করা হচ্ছে নিয়মিত, ঠিক সে কারণেই ক্রমশ আকাঙখা বাড়ছে, অন্য ইন্ডাস্ট্রির কিছু সিনেমার বলিউড রিমেক যদি না হয়, তাহলে হয়তো স্বস্তি আসবে ঢের। সেগুলো কোন সিনেমা, তা নিয়েই কথাবার্তা। 


১. মায়ানদী (মালায়ালাম

এই সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক- পরিবর্তনশীলতা। সিনেমার কোনো চরিত্র, কোনো ঘটনা, কোনো পরিণতিই যেন চূড়ান্ত না৷ জীবনের 'স্বতত এগিয়ে চলা অস্থিতিশীল আবহ'কেই মনে করিয়ে দেয় 'মায়ানদী' নামের অদ্ভুত সুন্দর এ নির্মাণ। এবং ঠিক এ কারণেই এটাও দ্ব্যর্থকন্ঠে বলা যায়, এই সিনেমার বলিউডি রিমেকে 'অধ্রুবক' সৌন্দর্যের এ বিস্ময়কর সমীকরণের ছিটেফোঁটাও আসবে না। তাই, প্রত্যাশা এটাই, বলিউডি নির্মাতাদের চোখ এই সিনেমার উপর না পড়ুক মোটেও। 

মায়ানদী সিনেমার পোস্টার

২. নাইন্টি সিক্স (তামিল)

'নাইন্টি সিক্স' এ শুধুমাত্র বিজয় সেথুপতির যে অভিনয়, তা অন্য ইন্ডাস্ট্রির আর কারো পক্ষে কতটুকু করা সম্ভব, তা নিয়ে শঙ্কা আছে ঢের। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হয়েও অল্পবয়স্ক কিশোরের মতন লাজুক অভিব্যক্তি, ভালোবাসার মানুষের জন্যে তীব্র আকুতি আর নির্মাণের শুরু থেকে শেষতক নিটোল এক ভালোবাসার গল্প বলে যাওয়ার মুন্সিয়ানা... এ জিনিস বলিউডে বানাতে গেলে নির্ঘাত গল্পের অপমৃত্যু ঘটবে। এবং ঠিক সেই দুর্ঘটনা বিবেচনায় 'নাইন্টি সিক্স'কে নিয়ে 'রিমেক' এর বাড়াবাড়ি না করাটাই হবে সবচেয়ে সঙ্গতিপূর্ণ।

নাইন্টি সিক্স সিনেমার পোস্টার

৩. পিসাসু (তামিল

মিসস্কিন এর সিনেমা মানেই অন্যরকম সিনেম্যাটিক বিউটি। 'পিসাসু'ও তেমন। ভৌতিক আবহ দিয়ে শুরু হয়ে এ গল্প যেভাবে ঢুকে পড়ে অনাস্বাদিত এক ভালোবাসার আখ্যানে, চমক আসে ঠিক সে জায়গাটিতেই। এই যে আপাত ভিন্নরকম দুটি জঁরার মিলন, এই দুরূহ কর্ম শুধু মিসস্কিন এর পক্ষেই সাধন করা সম্ভব। এবং যতদিন না বলিউডে এরকম কোনো নির্মাতা আসছেন, ততদিন 'পিসাসু'র মত সিনেমার 'রিমেক'চিন্তা না করাই উত্তম।

পিসাসু সিনেমার পোস্টার

৪. কুম্বালাঞ্জি নাইটস (মালায়ালাম) 

এ এক অদ্ভুত সুন্দর সিনেমা! মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রি এমনিতেও এমন সব সিনেমা বানায় নিয়মিত, কথা বলার জো থাকেনা। তারমধ্যেও 'কুম্বালাঞ্জি নাইটস' আলাদা স্বাতন্ত্রের। পুরো নির্মাণজুড়ে চরিত্রগুলোর  এত ডাইমেনশন, ঘটনাগুলোর এত বিচিত্রতা... বলিউড যদি এই সিনেমার রিমেক করে, ঠিকঠাক আনতে পারবে সব? বোধহয় না। তাও ধরলাম, সবাইকেই আনলো ঠিকঠাক। কিন্তু এই এক সিনেমায় 'সৌবিন সাহির' এর যে অভিনয়, সে অভিনয়কে কিভাবে টেক্কা দেবে কেউ? সেটা কার পক্ষেই বা সম্ভব? 

কুম্বালাঞ্জি নাইটস সিনেমার পোস্টার

৫. আঙ্গামালি ডায়েরিজ (মালায়ালাম)

লিজো জোশে পেলিসারির সিনেমার রিমেক করতে গেলে যে বিস্তর 'তাকত' থাকার প্রয়োজন, তা সচেতন দর্শকমাত্রই জানেন। গত বছরে মুক্তি পাওয়া 'চুরুলি' কিংবা কয়েক বছর আগের 'আঙ্গামালি ডায়েরিজ'... এসব সিনেমার রিমেক করতে গেলে যে খাটাখাটুনির প্রয়োজন হবে, সে খাটাখাটুনি দিয়ে বলিউডি দুই-তিনটি কমার্শিয়াল সিনেমা অনায়াসে নামিয়ে ফেলা সম্ভব। তবুও বিস্ময় এটাই, ইতোমধ্যেই হিন্দিতে 'আঙ্গামালি ডায়েরিজ' এর রিমেক শুরু হয়েছে। জানি না, লিজোর সিনেমা নিয়ে কোন পাগলামি হবে এবার! 

আঙ্গামালি ডায়েরিজ সিনেমার পোস্টার

৬. থান্নির মাথান দিনানগাল (মালায়ালাম)

এ সিনেমায় আপাতদৃষ্টিতে কোনো গল্প নেই। আছে টুকরো টুকরো স্মৃতিরোমন্থন। অজস্র ম্যাক্রো ইমোশনস নিয়ে এগোনো এ সিনেমার পরতে পরতে এমন সব চিরকুট, যার সাথে মিশে আসে নষ্টালজিয়ার অজস্র উপাদান। এরকম সিনেমা 'রিমেক' করলে আসলেই কি কিছু দাঁড়াবে? বোধহয় না। একজনের ব্যক্তিগত ডায়েরি থেকে টুকলিফাই করে আরেকজন লিখলে আর যাই আসুক, আবেগ কি ঠিকঠাক আসবে মোটেও? এবং এই সিনেমার 'রিমেক' করলে আবেগজনিত ঠিক এখানেই তৈরী হবে পার্থক্য।

থান্নির মাথান দিনানগাল সিনেমার পোস্টার

৭. কান্নাথিল মুথামিত্তাল (তামিল)

'কান্নাথিল মুথামিত্তাল' এর পুরোটাজুড়ে এক শিশুর তার প্রকৃত মা'কে খুঁজে পাওয়ার জার্নি। এই যাত্রাপথে শ্রীলঙ্কান গৃহযুদ্ধ আছে, অ্যাডোপ্টিং প্যারেন্টস এর অসহায়ত্ব আছে, আছে কাছের মানুষকে খুঁজে পাওয়ার আকুলতাও। খুব সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অনুভূতিতে সমৃদ্ধ এ সিনেমার রিমেক যদি বলিউড করে তাহলে এই সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো কতটুকু সূক্ষ্ম থাকবে আর কতটুকু হবে স্থুল, তা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ থেকেই যায়! 

কান্নাথিল মুথামিত্তাল! 

জীবদ্দশায় বলিউডের এহেন 'বার্ধক্য'দশা দেখবো, তা হয়তো দূরতম কল্পনাতেও ভাবিনি কখনো। তবু প্রত্যাশা রাখি, বলিউড আবার স্বমহিমায় আবির্ভূত হবে একদিন। কেন এই ইন্ডাস্ট্রি উপমহাদেশের অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিকে শাসন করার যোগ্যতা রাখে, সেটির প্রমাণ দেওয়ার জন্যে তাদের দোর্দন্ডপ্রতাপে হাজির হওয়াটা বেশ জরুরিও। আপাতত সেরকম কোনো আবির্ভাবের জন্যে অপেক্ষা আর বর্তমান সময়ের জন্যে হাপিত্যেশ করেই এই লেখার সমাপ্তি টানি আজ। 

তথ্যসূত্রঃ ফিল্ম কম্পানিয়ন! 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা