শ্যামল মাওলা, মম, পরীমনি, রওনক হাসান, হাসনাত রিপন, আবুল হায়াত- এতসব অভিনেতায় ভরপুর একটা সিনেমা। এখন শুধু দেখার বিষয়, স্ফুলিঙ্গ আসলেই নামের প্রতি সুবিচার করতে পারবে, নাকি নিধিরাম সর্দারের মতো কাজের বেলায় পাজি হয়ে থাকবে...

আর মাত্র ১২ দিন পর মুক্তি পেতে যাচ্ছে তৌকির আহমেদ এর চলচিত্র "স্ফুলিঙ্গ'। সিনেমার ট্রেলার ইতিমধ্যেই বেশ আলোড়ন তৈরি করে ফেলেছে অনলাইন দুনিয়ায়। ভিন্ন ধরনের গল্প, মিউজিক্যাল সিনেমা, মুক্তিযুদ্ধের উপর সরাসরি প্রভাব, এই প্রজন্মের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে মিলকরণ সহ সব কিছু মিলিয়েই "স্ফুলিঙ্গ' বেশ আগ্রহ জাগানিয়া অবস্থায়। বিশেষ করে করোনা সময়ে চলাকালীন বিশাল ধাক্কা কাটিয়ে উঠেই, প্রথম পাবলিকলি যে সিনেম্যাটিক ধামাকা টাইপের সিনেমা প্রয়োজন ছিলো, সেটা না হলেও ভিন্ন ঘারানার সিনেমা উপহার দেয়ার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানানই যায়। 

তবে এই সাধুবাদ ১৯শে মার্চের পরেও থাকবে কি না সেটার জবাব সময় আর দর্শকের হাতেই তোলা থাকুক। আজ বরং স্ফুলিঙ্গের কাস্টিং নিয়ে কথা হোক। এমন আনইউজাল কাস্টিং নিয়ে কথা না বললেই নয়। চলুন তাহলে দেখে আসি কেমন হলো স্ফুলিঙ্গের কাস্টিং?

শ্যামল মাওলা 

শ্যামল মাওলা ভালো অভিনেতা। নিজের চরিত্রের প্রতি সম্মান দেয়া অভিনয়শিল্পী খুব কমই আমাদের দেশে। কিছু একটা হয়ে গেলেই পরিশ্রম জিনিসটা কে শখ বানিয়ে ফেলা, একরকম ডাল-ভাত করে ছেড়েছেন। সেখানে শ্যামল কিছুটা ব্যতিক্রমী, পরিশ্রম করতে জানেন। আর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসার পর শ্যামলের প্রতি সবারই আগ্রহটা বেশ অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। 

নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়ার কারণে যেমন রাধিকা আপ্তের রমরমা অবস্থা, ওটিটির আশীর্বাদে আমাদের দেশে রাধিকা আপ্তের জায়গায় শ্যামল মাওলা! তাকে নিয়ে তৌকিরের বাজি এবার মেইনস্ট্রিমের লীড রোলে। তৌকিরের প্রজ্ঞা আর শ্যামলের পরিশ্রম মিলিয়ে বেশ ভালো কিছু যে পেতে চলেছি এতে কোন সন্দেহ নেই। সিনেমা কেমন করবে না করবে সেটা হয়তো বলা যায় না, তবে এখনই শুধু শ্যামলের উপর বাজি ধরার লোকের অভাব হবে না।

জাকিয়া বারী মম

লাক্সের এই সুন্দরী অনেক দূর যাবে বলেই মনে হয়েছিলো লাক্সের সময়টায়। অনেক দূর বলতে মেইনস্ট্রিম সিনেমায় দূরে যাওয়ার কথা বলছি। অথচ সিনেমায় সেভাবে তাকে পাওয়া যায়নি। হয়তো সিনেমার চরিত্র, গল্পের প্রয়োজনীয়তা কিংবা প্রযোজক-পরিচালকের সাথে বনিবনা অথবা শিডিউল জটিলতা আর দিন শেষে ভালো গুনীদের ব্যবহার করতে না জানা তো আমাদের চিরন্তন সমস্যা। যাই হোক, স্ফুলিঙ্গে তাকে দেখে বেশ একটা ভালোলাগা কাজ করছে। 

ট্রেলারে দেখে তার চরিত্রটা খানিকটা গালি বয় সিনেমার কালকি কোয়েচিন এর চরিত্রের মতো মনে হলো। বাঁধভাঙা, কাউকে তোয়াক্কা না করা, একগুঁয়ে কিন্তু ট্যালেন্টেড একজন। এমনই তার চরিত্র সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। শ্যামলের সিনেম্যাটিক চরিত্রের সামনে এগিয়ে যাওয়া অনেকটাই তার উপর নির্ভর করছে, এটা বুঝতে আইনস্টাইন হওয়া লাগে না।

পরীমনি

আমি পরীমনির চরিত্র বিশ্লেষণে যাব না। শুধু একটা প্রশ্ন রাখব। বর্তমানে আমাদের দেশে পাশের বাড়ির মেয়ে টাইপের চরিত্রের জন্য সবচেয়ে পারফেক্ট চয়েজ কিন্তু পরীমনি। ভালো হাতে পরলে তার ভেতরেও যে অভিনয়ের আগুন লুকানো সেটা কিন্তু স্বপ্নজালেই প্রমান দিয়েছেন। আমরা কি তাকে ব্যবহার করতে পেরেছি? না পারিনি। আর এই না পারার জন্য কিন্তু পরী'র নিজের দ্বায়ও অনেকখানি। 

কয়দিন আগে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি বলেছেন "ওর (পরী) মতো সুন্দরী আর ট্যালেন্টপুল একটা মেয়ে যদি একটু পাগল না হতো তাহলে আমাদের কারোরই অভিনয় জগতে টেকা মুশকিল হয়ে যেতো'। পরিচালকদের বলবো আপনারা পরীর গুণ নষ্ট করবেন না গার্বেজ কিছু বানিয়ে, বরং তার ভেতরের আসল সৌন্দর্য বের করে আনুন। আর পরী কে বলবো " আপনি একটু পাগলামী কম করুন'।

রওনক হাসান

নামের সাথেই যার সমার্থক শব্দ ঠিকঠাক ব্যবহার না করার আক্ষেপ জড়িত। স্ফুলিঙ্গে তার চরিত্র ট্রেলারে যতটুকু দেখা গেছে সে অনুযায়ী বলা যায়, বড়লোক এলিজিবল ব্যাচেলরের চরিত্র। যে কিনা পরীকে পছন্দ করবে, বিয়ের কথাও চলবে কিন্তু পরবর্তীতে তারই সাহায্য নিয়ে হয়তো শ্যামলের কনসার্ট হবে (পুরোটাই ধারণা)।

পিন্টু ঘোষ

হ্যাঁ এই নামটা বেশ সারপ্রাইজই ছিলো। আমাদের দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে বেশ ভালোভাবেই নামটা জড়িত। তাই বলে সিনেমায়! হ্যাঁ, শুরুতে অবাক লাগলেও যেহেতু মিউজিক্যাল সিনেমা, আর ব্যান্ডদল নির্ভর- তাতে পিন্টু ঘোষের নাম আরো বেশি করে চুম্বকীয়।

এ ছাড়াও স্ফুলিঙ্গে নেগেটিভ চরিত্রে আছে হাসনাত রিপন। শহীদুল আলম সাচ্চু'র ছোট্ট ডায়লগ ট্রেলারে তাতে বোঝাই যায় তিনিও নেগেটিভ চরিত্র করছেন। আর কলেজের প্রিন্সিপালের চরিত্র করছেন আবুল হায়াত।

শুরুতেই বলেছি স্ফুলিঙ্গ কেমন করবে তা হয়তো ১৯ মার্চের পর বলা যাবে। তবে তার ভিন্নধারার গল্পের সমন্বয়, মিউজিক্যাল জার্নি, মুক্তিযুদ্ধের সাথে সরাসরি প্রেক্ষাপট আর এমন দুর্দান্ত আর আনইউজাল কাস্টিং হলে ভরসার জায়গাগুলো বিস্তৃত হয় অনেকখানি। এখন শুধু দেখার বিষয় স্ফুলিঙ্গ চারপাশে কতটা স্ফুলিঙ্গতা ছড়াতে পারে নাকি নিধিরাম সর্দারের মতো কাজের বেলায় পাজি হয়ে থাকে!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা