‘দ্যা শো মাস্ট গো অন’ বলে একটা কথা আছে। তৌকির আহমেদের মত সাহসী নির্মাতারা এই দুঃসময়েও সিনেমা বানিয়েছেন এবং বানিয়ে মুক্তিও দিচ্ছেন। সুদিনের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকেননি। তাই তৌকির আহমেদের এই সাহসিকতার প্রশংসা না করে উপায় নেই...

‘স্ফুলিঙ্গ’ নামের নতুন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তৌকীর আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাচ্ছে এই স্বাধীনতার মাসেই (১৯ মার্চ)। ‘স্ফুলিঙ্গ’ অর্থ আগুণের ফুলকি বা কণা (ইংরেজীতে স্পার্ক অফ ফায়ার)। 
আমাদের চলচ্চিত্রের দুঃসময়ে তৌকিরের আহমেদের সিনেমা বরাবরই আগুনের ফুলকির মত। 

মনে পড়ে  রুপকথার গল্প (২০০৬) ছবিটির কথা। তৌকীর আহমেদ নির্মিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ছিল এটি। চলচ্চিত্রটিতে তিনি যেভাবে গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে একটা মানবিক গল্প বলেছেন তা সিনেমার পর্দায় দেখে দর্শক হিসেবে কিছুটা হলেও চমকে গিয়েছিলাম। মূলত একই ধরনের গল্প দেখতে দেখতে বিরক্ত আমরা বাংলা সিনেমার দর্শকরা বলতে গেলে প্রায় শূন্য প্রত্যাশা নিয়ে সিনেমা হলে যাই। কিন্তু তৌকীর আহমেদ আমাকে বেশ খানিকটা চমকে দিতে পেরেছিলেন তার সরল অথচ শক্তিশালী গল্প বলার ধরনে।   

এর আগে অবশ্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘জয়যাত্রা’ (২০০৪) - এ তিনি আধুনিক নির্মানশৈলী দিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন সবাইকে। তখনো পর্যন্ত সিনেমাস্কোপ ক্যামেরায় চিত্রধারণ, ডিজিটাল শব্দসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশের সিনেমায় একেবারে অনিয়মিত বা এক কথায় বলতে গেলে বিরল ছিল। 

২০০৭- এ তৌকির আহমেদ বানিয়েছিলেন দারুচিনি দ্বীপ। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসকে তিনি যতটা ভালভাবে পর্দায় উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন তাতে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কেউ তার সৃষ্টিকে এতোটা ভালভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন বলে আমার মনে হয় না। যার প্রমাণ হিসেবে তরুনদের মধ্যে দারুচিনি দ্বীপ ছবিটির গ্রহণযোগ্যতা এখনো সমানভাবে রয়ে গেছে। 

গত দশকে তৌকির আহমেদের অজ্ঞাতনামা (২০১৬), হালদা (২০১৭) এবং ফাগুণ হাওয়ায় (২০১৯) ছবিগুলোও বাংলা সিনেমার আঁধার রাতে একটুখানি হলেও আলো জ্বালিয়েছিলো। যার ফলে সিনেমাবিমুখ শিক্ষিত দর্শকশ্রেনী বাংলা সিনেমা নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছিল।

স্ফুলিঙ্গ সিনেমার অফিসিয়াল পোস্টার

কিন্তু সারা বিশ্বের সিনেমা শিল্পের উপর  ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন আঘাত নিয়ে আসে করোনা মহামারি। চলচ্চিত্র নিয়ে আমাদের যে নতুন করে জেগে ওঠার স্বপ্ন তা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় এই ভীষণ কঠিন আঘাতে। গত বছর মার্চ থেকে আমাদের সিনেমা শিল্প এক প্রকার স্থবির হয়ে আছে। শুরুতে সিনেমা হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর কয়েক মাস পর যখন সিনেমা হল মালিকদের অনুরোধে সরকার সিনেমা হল খুলে দেন- তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সিনেমা হলগুলো ধুঁকে ধুঁকে চলছে। দর্শক সিনেমা হলে আসবেন কিনা এই ভয়ে মুক্তির জন্য প্রস্তুত থাকার পরও নির্মাতারা সিনেমা মুক্তি দিচ্ছেন না। সিনেমাই যদি না মুক্তি দেয়া হয় তাহলে সিনেমা হল খুলে রেখে কি হবে! তাই বন্ধ হতে থাকার মিছিলে যোগ হতে থাকে আরো অনেক সিনেমা হল ।  

অল্প যে কয়জন নির্মাতা এই দুঃসময়েও সিনেমা মুক্তি দিয়েছেন আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। তারা ভীষণ সাহসী এবং একইসঙ্গে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। কিন্তু আফসোস এই যে, অনেক নির্মাতা তাদের মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা বসিয়ে রেখেছেন সুদিনে মুক্তি দেয়ার আশায়। কিন্তু সিনেমা সংকটে যেভাবে সিনেমা হলগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে তাতে সুদিনে তারা ছবি মুক্তি দেয়ার জন্য সিনেমা হল পাবে তো? 

‘’দ্যা শো মাস্ট গো অন’’ বলে একটা কথা আছে। তৌকির আহমেদের মত সাহসী নির্মাতারা এই দুঃসময়েও সিনেমা বানিয়েছেন এবং বানিয়ে মুক্তিও দিচ্ছেন। সুদিনের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকেননি। তাই তৌকির আহমেদদের এই সাহসিকতার প্রশংসা না করে উপায় নেই। 

বাংলা সিনেমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তাই আমি তৌকির আহমেদের মুক্তি প্রতিক্ষীত চলচ্চিত্র ‘’স্ফুলিঙ্গ’’ প্রচারে সামান্য হলেও ভুমিকা রাখার প্রচেষ্টায় আগামী কয়েকদিন নানান আঙ্গিকে তৌকির আহমেদ এবং তার চলচ্চিত্রযাত্রা নিয়ে লিখবো। লিখবো স্ফুলিঙ্গ ছবির দুই অভিনেত্রী পরিমনি এবং জাকিয়া বারী মমকে নিয়েও। প্রিয় সঙ্গীত স্রষ্টা পিন্টু ঘোষসহ ‘’স্ফুলিঙ্গ’’ চলচ্চিত্রের অন্যান্য কলা-কুশলীদের সম্পর্কেও  জানার এবং জানানোর চেষ্টা করবো। আশা করি, আপনারাও ভাল চলচ্চিত্রের পাশে থাকবেন। স্বাধীনতার মাসে ‘’স্ফুলিঙ্গ’’ সিনেমা হলে গিয়ে দেখবেন।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা