'স্টুডিও গিবলি'র প্রিয় পাঁচ নির্মাণ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
'গিবলি' শব্দের অর্থ মরুভূমিতে বয়ে যাওয়া মিষ্টি বাতাস। 'স্টুডিও গিবলি'র স্রষ্টা মিয়াজাকিও ভেবেছিলেন-'স্টুডিও গিবলি' এমন সব সিনেমা নিয়ে আসবে, যা অ্যানিমে ইন্ডাস্ট্রির হাওয়াবদল করবে পুরোদমে। সেই ভাবনা থেকেই 'গিবলি'র যাত্রা শুরু, যাত্রাপথের এত বছরের মুগ্ধতার আখ্যানের শুরু। যে মুগ্ধতা সময়ের এত চলকের মধ্যেও কখনো তো কমেইনি। বরং বেড়েছে। নিয়মিত। ক্রমাগত।
যারা অ্যানিমে পছন্দ করেন, অথবা যারা অ্যানিমে পছন্দ করেন না, তাদের সবাইকেই একাট্টা করতে পেরেছিলো যে প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠান, তার নাম- স্টুডিও গিবলি। সময়ের নানা প্রকোষ্ঠে এই প্রতিষ্ঠান এমনসব অ্যানিমে মুভি নিয়ে এসেছে দর্শকের সামনে এবং সেসব অ্যানিমে মুভির মধ্যে জীবনবোধের এমন সব টুকরো টুকরো দর্শন বরাবরই ছিলো, দর্শক মুগ্ধ না হয়ে কোনোকালেই পারেনি। 'মাই নেইবার তোতোরো'ই বলি কিংবা 'স্পিরিটেড অ্যাওয়ে' অথবা 'গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইজ'... 'স্টুডিও গিবলি'র সৌকর্য ও কারিশমা বরাবরই অপার্থিব আবহ তৈরী করেছে। চমক দেখিয়েছে গল্প, গল্প-বয়ান এবং দৃশ্যায়ণে৷ সে কারণেই 'স্টুডিও গিবলি'র সব কাজই প্রিয়, বিশেষরকম কাছের। তবুও এর মধ্যেই যদি সবচেয়ে প্রিয় পাঁচটি নির্মাণ নিয়ে কথা বলতে হয়, তাহলে যাদের নাম আসে কলমের অগ্রভাগে, তাদের নিয়েই আজকের বয়ান৷
১. মাই নেইবার তোতোরো
এই সিনেমার 'তোতোরো'ই 'স্টুডিও গিবলি'র চেনা মাসকট, যে মাসকট সারা পৃথিবীর কাছেই কম-বেশি পরিচিত। সমাদৃত। 'তোতোরো' এমন এক গোলগাল শশক, যে চিৎকার করতে ভালোবাসে, জাদু দেখাতে ভালোবাসে। সেই তোতোরো'র আবাসস্থলের পাশেই একদিন আসে দুই মেয়ে এবং তাদের বাবা। যাদের মা অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালে। এই বাসস্থলে আসার কিছুদিন পরেই তোতোরো'র সাথে পরিচয় হয় তাদের৷ এভাবেই শুরু হওয়া 'মাই নেইবার তোতোরো'র গল্প ক্রমশ প্রবেশ করে বিস্ময়কর এক মোড়কে। শৈশব, শিশুকাল, জাদুবাস্তবতা নিয়ে অদ্ভুত সুন্দর এই সিনেমা পুরোটা সময়ই আচ্ছন্ন করে রাখে দুর্দান্ত সব চমকে, বিস্ময়ে।
২. গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইজ
সাল ১৯৪৫, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাপান আত্মসমর্পণ করেছে, এমন এক যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ে শুরু হওয়া এই সিনেমার গল্পে মিশে থাকে প্রোটাগনিস্ট দুই ভাই-বোনের আখ্যান। অনেকের মতে- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে এরকম মর্মান্তিক সিনেমা আর নেই! এই গল্পের বিষাদ এতটাই ঘন, প্রলয় এতটাই মারাত্মক, আক্ষেপ এতটাই বিস্তীর্ণ... 'গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইজ' দ্বিতীয়বার দেখার সাহস খুব কম মানুষই করবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে নানা আঙ্গিকে অজস্র সিনেমার তো অভাব নেই মোটেও, কিন্তু এসবের মধ্যেও 'গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইজ' বিশেষভাবে স্বকীয় হয়ে থাকে অনুভূতির নানারকম মাত্রাজ্ঞানের সৌকর্যেই।
৩. স্পিরিটেড অ্যাওয়ে
'স্পিরিটেড অ্যাওয়ে' এক হাসিখুশি মেয়ের গল্প, যে আচকমা একদিন চলে যায় এমন এক জগতে, যে জগতে ঈশ্বর, দানব ও জাদুর আনাগোনা। কল্পনা যে কতদূর যেতে পারে, জাদুবাস্তবতার গণ্ডি যে হতে পারে কত বিস্তীর্ণ এবং এসবের মাঝখানেও যে কত চমৎকারভাবে বলা যেতে পারে দারুণ অর্থবহ এক গল্প... সেটির সাপেক্ষেই দুর্দান্ত এক নির্মাণ হয়ে থাকে 'স্পিরিটেড অ্যাওয়ে।' এবং এই সিনেমাই প্রথম সিনেমা, যে সিনেমার সুবাদে প্রথমবারের মতন 'স্টুডিও গিবলি' পরিচিত হয় বিশ্বমঞ্চে।
৪. প্রিন্সেস মনোনোক
তেরোশ শতাব্দীর জাপানের এক যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শুরু হয় এই সিনেমার গল্প। 'অ্যানিমাল গড' যারা প্রকৃতি-রক্ষায় তৎপর এবং মানুষ, যারা প্রকৃতি-ধ্বংসে তৎপর, তাদের মধ্যে শুরু হয় প্রলয়ঙ্কারী এক যুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাঝখানে আটকে পড়ে 'আশিতাকা' নামে এক তরুণ। তাকে কেন্দ্র করেই ক্রমশ এগোনো গল্পে আসে লোভী মানুষ, প্রকৃতির সংকট, জাদুবাস্তবতা সহ বহুকিছু। দারুণ ন্যারেশন স্টাইল, সাথে অনবদ্য ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন... 'স্টুডিও গিবলি' কেন সবার থেকে সেরা, তার স্বপক্ষে আর কিছু না, শুধুমাত্র এই 'প্রিন্সেস মনোনোক'ই হতে পারে অন্যতম উদাহরণ।
৫. অনলি ইয়েস্টারডে
যদিও এই সিনেমাকে অনেকেই 'স্টুডিও গিবলি'র অন্যতম শ্রেষ্ঠ নির্মাণ বলেন না, তবুও 'অনলি ইয়েস্টারডে'র মধ্যে বিস্মৃতপ্রায় অতীতের এমনসব কাদামাটি অনুভূতি মিশে থাকে, এই নির্মাণকে কেন যেন উপেক্ষা করা যায় না মোটেও। গল্পের পুরোটাজুড়েই থাকে 'তায়েকো' নামের সাতাশ বছরের এক মেয়ে, যে শহুরে জীবন থেকে কিছুদিনের জন্যে আসে গ্রামে। গ্রামে এসেই সে হয়ে পড়ে স্মৃতিকাতর, ক্রমশ মুখোমুখি হয় অতীতের কিছু প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিরও। এসব নিয়েই গল্প। নষ্টালজিয়া, শৈশবের বিস্মৃতপ্রায় আখ্যান কিংবা সমসাময়িক ঝঞ্জাট... সব মিলেমিশে অদ্ভুত এক দ্যোতনাই যেন ছড়ায় 'অনলি ইয়েস্টারডে।'
'গিবলি' শব্দের অর্থ মরুভূমিতে বয়ে যাওয়া মিষ্টি বাতাস। 'স্টুডিও গিবলি'র স্রষ্টা মিয়াজাকিও ভেবেছিলেন- 'স্টুডিও গিবলি' এমন সব সিনেমা নিয়ে আসবে, যা অ্যানিমে ইন্ডাস্ট্রির হাওয়াবদল করবে পুরোদমে। সেই ভাবনা থেকেই 'গিবলি'র যাত্রা শুরু, যাত্রাপথের এত বছরের মুগ্ধতার আখ্যানের শুরু। যে মুগ্ধতা সময়ের এত চলকের মধ্যেও কখনো তো কমেইনি। বরং বেড়েছে। নিয়মিত। ক্রমাগত। এবং ঠিক এ কারণেই 'গিবলি' এখনও যেমন প্রাসঙ্গিক, সামনের সময়েও যে এরকমই প্রাসঙ্গিক থাকবে, সেটিও দ্ব্যর্থকন্ঠে বলা যায় নিশ্চিন্তেই৷