তাহির রাজ ভাসিন: আউটসাইডার থেকে ব্যস্ততম অভিনেতা
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
মারদানি'তে অ্যান্টাগনিস্ট চরিত্রে কাজের পরে তিনি 'ফোর্স টু'তে এসেছেন 'গ্রে ডাইমেনশন' এর এক চরিত্রে। করেছেন 'ছিছোড়ে'র মতন সেমি-কমার্শিয়াল সিনেমা থেকে 'এইটি থ্রি'র মতন স্পোর্টস ড্রামা। যুক্ত হয়েছেন মান্টো'র মত পিওর আর্টফিল্মেও। বেশ কিছু নির্মাতার সাথে কাজ করছেন নিয়মিত। ইচ্ছে আছে, বাংলা ভাষার সিনেমাতেও অভিনয় করবেন। ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, বি-টাউনে মামা-কাকার প্রভাব নেই... এরকম এক অভিনেতা যেভাবে স্বীয়শক্তিতে দোর্দণ্ডপ্রতাপে এগোচ্ছেন, তাতে বিস্ময় ক্রমশই বাড়ছে...
'সফল' হতে খুব বেশি কিছু না, দরকার সামান্য সুযোগ আর সে সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার। যেটাই খুব স্পষ্টভাবে দেখি বলিউডি অভিনেতা তাহির রাজ ভাসিনের ক্ষেত্রে। ২০১২ সালে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু, দুই বছর পরেই 'মারদানি' সিনেমায় ভিলেনের চরিত্রে রানী মুখার্জির বিপরীতে দুর্দান্ত অভিনয়, ভিলেনের সেই চরিত্রটি দর্শক-জনপ্রিয় হওয়া- বলতে গেলে তাহির রাজ ভাসিনের উত্থান 'মারদানি' থেকেই শুরু। এরপর সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, স্ট্রিমিং সাইট, নেটফ্লিক্স; হলো বহুকিছুই। এবং হচ্ছে এখনও। একের পর এক কাজ করে যাচ্ছেন এই অভিনেতা৷ কাজগুলো হচ্ছে দর্শকপ্রিয়ও। যেসব তারকা খুব তাড়াতাড়ি 'লাইমলাইট' পায়, তারা খুব তাড়াতাড়িই সে অবস্থান হারায়... এই ন্যারেটিভকে মিথ্যে প্রমাণ করেই যেন তাহির রাজ ভাসিন এগিয়ে যাচ্ছেন ক্রমশ। পাশাপাশি, দর্শককেও করছেন মুগ্ধ।
শুরু করা যাক 'মারদানি' দিয়ে। অনেকেই জানেন, 'ব্রেকিং ব্যাড' এর 'ওয়াল্টার হোয়াইট' থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে 'মারদানি'র 'ওয়াল্ট' চরিত্রের জন্ম। যদিও 'ব্রেকিং ব্যাড' এর ক্লাসিক 'ওয়াল্টার' এর সাথে এই 'ওয়াল্টার' এর মিল কতটুকু, তা নিয়ে চাইলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ হতেই পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এটাই, 'মারদানি' সিনেমার এই চরিত্রটিকে বেশ পছন্দই করেছিলো দর্শক। তাহির এই চরিত্রে এতটাই দারুণ অভিনয় করেছিলেন, বেশ অনেকদিন পর্যন্ত তিনি পরিচিত ছিলেন 'মারদানির ভয়ঙ্কর ভিলেন' নামেই।
এই চলচ্চিত্রের প্রশংসাবাক্য ফুরোয়নি, এরকম এক সময়ে কাজ শুরু করলেন 'ফোর্স টু' সিনেমায়। জন আব্রাহামের বিপরীতে 'গ্রে' শেডের অ্যান্টাগনিস্ট রোলে পর্দায় এলেন। এরপর ক্রমশ নানা মাত্রার চরিত্রের বেশ কিছু সিনেমাতে উপস্থিত হলেন তিনি। নীতিশ তিওয়ারির 'ছিছোড়ে' সিনেমায় 'ডেরেক' চরিত্রে স্বল্পদৈর্ঘ্যের অথচ অর্থবহ অভিনয় করলেন। অভিনয় করলেন 'মান্টো' সিনেমাতেও। বেশ কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া কপিল দেবের বায়োপিক সিনেমা 'এইটি থ্রি'তেও আবির্ভূত হলেন, 'সুনীল গাভাস্কার' চরিত্রে।
আবার, সিনেমাই শেষ কথা না। নেটফ্লিক্সের 'ইয়ে কালি কালি আঁখে' ওয়েব সিরিজে যে তুখোড় অভিনয় তাহেরের, তা নিয়মিত মানুষের মুখে মুখে ফেরে। এই নেটফ্লিক্সেই কিছুদিন আগে মুক্তি পেলো তার সিনেমা 'লুপ লাপেটা।' তাপসী পান্নুর সাথে প্রোটাগনিস্ট চরিত্রে করলেন পাল্লা দিয়ে দুর্দান্ত অভিনয়ও। ভিলেন, হিংস্র চরিত্র, ধূসর অবয়ব... নানাবিধ বৈচিত্র্য টপকে 'লুপ লাপেটা'য় তাহির 'রোমান্টিক হিরো' চরিত্রে অভিনয় করলেন, অভিনয় হলোও বেশ উপভোগ্য।
তাহির রাজ ভাসিনের এই যে ক্যারিয়ার, এখানে একটা বিষয় বিশেষভাবে প্রশংসার, এবং যে বিষয়টিই তাকে সবার কাছে করেছে জনপ্রিয়, সেটি হচ্ছে- কাজের বৈচিত্র্য। 'মারদানি'তে অ্যান্টাগনিস্ট চরিত্রে কাজের পরে তিনি 'ফোর্স টু'তে এসেছেন 'গ্রে ডাইমেনশন' এর এক চরিত্রে। করেছেন 'ছিঁছোড়ে'র মতন সেমি-কমার্শিয়াল সিনেমা থেকে 'এইটি থ্রি'র মতন স্পোর্টস ড্রামা। যুক্ত হয়েছেন মান্টো'র মত পিওর আর্টফিল্মেও। অর্থাৎ, তার ফিল্মোগ্রাফির দিকে তাকালে এটা বেশ পরিষ্কার, অভিনয়ের নানা শাখা-প্রশাখাতে নিয়মিত গিয়েছেন তিনি। উল্টেপাল্টে দেখেছেন সবকিছু। ওয়েব সিরিজ থেকে সিনেমা, নেটফ্লিক্স থেকে থিয়েটার... অভিনয়ের নানা মাধ্যমেও নিয়মিত উপস্থিত হয়েছেন। নিজেকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। আবার, নিজেই সে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছেন। অভিনয়ের মূলসূত্র তো এটাই। নিজেকে ভাঙা, নিজেকে গড়া। ক্রমাগত। বারবার। সেটিই করে এসেছেন তিনি। গত এক দশক ধরে।
তাহির রাজ ভাসিনের এখনের সময়টা বেশ ব্যস্ততার৷ 'ইয়ে কালি কালি আঁখে'র দ্বিতীয় সিজন আসবে সামনেই৷ তাহির অভিনীত, মহেশ ভাটের জীবনগল্প থেকে খানিকটা অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত ওয়েব সিরিজ 'রঞ্জিশ হি সহি'ও ক'দিন আগেই মুক্তি পেলো। বেশ কিছু নির্মাতার সাথেও কাজ চলছে নিয়মিত। ইচ্ছে আছে, বাংলা ভাষার সিনেমাতেও অভিনয় করবেন। অর্থাৎ, বিরতিবিহীন ব্যস্ত এক সময়ই পার করছেন তিনি। যদিও এই ব্যস্ততা দেখা বেশ শান্তির। ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, বি-টাউনে মামা-কাকার প্রভাব নেই... এরকম এক অভিনেতা যখন স্বীয়শক্তিতে এরকম দোর্দণ্ডপ্রতাপে এগোতে থাকেন, তখন তা বেশ সন্তুষ্টিও দেয়। এবং সন্তুষ্টির সে ক্ষেত্র থেকেই প্রত্যাশা, তাহির রাজ ভাসিনের এ পথচলা অব্যাহত থাকুক। অক্লান্ত পরিশ্রম আর অদম্য মনোবল তাকে বলিউডের শক্তিশালী গুণী অভিনেতায় পরিণত করুক। শুভকামনা।