তৌকীর আহমেদ: স্থপতি থেকে অভিনেতা, তারপর নির্মাতা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

বুয়েটের স্থাপত্যকলায় পড়াশোনার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন মঞ্চ নাটকে, সেখান থেকে টিভি নাটক। নব্বইয়ের দশকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন ছিলেন তিনি। তারপর এলেন পরিচালনায়, সোনা ফললো সেখানেও...
২০০২ সাল, টেলিভিশন নাটকের একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেতার বাসনা জাগলো তিনি সিনেমা বানাবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, তবে সেজন্য নিজেকে প্রস্তুতও করেছেন তিনি। চলচ্চিত্র নির্মানের উপর নিউইয়র্ক থেকে প্রশিক্ষন শেষে দেশে এলেন, গল্প হিসেবে বেছে নিলেন বাঙালীর গৌরব মুক্তিযুদ্ধকে।প্রখ্যাত নির্মাতা ও সাহিত্যিক আমজাদ হোসেনের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস 'অবেলায় অসময়' অবলম্বনে সিনেমা নির্মানের হাত দিলেন, নাম দিলেন 'জয়যাত্রা'।
সরকারী অনুদানের জন্য জমা দিয়েছিলেন, কিন্তু বিধিবাম, পেলেন না, কোনো প্রযোজক ও পাননি। অবশেষে নিজের জমানো অর্থ নিয়ে শুরু করলেন সিনেমা নির্মানের কাজ, অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত করলেন দেশসেরা অভিনয়শিল্পীদের। কিন্তু মাঝপথে পড়লেন অর্থ সংকটে, এগিয়ে এলেন অভিনয়শিল্পীরা। বিনা পারিশ্রমিকে সবাই অভিনয় করলো। সিনেমা নির্মান শেষ, এবার মুক্তির পালা। কিন্তু এখানেও নানান বিপত্তি, অবশেষে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সহায়তায় সিনেমাটা মুক্তি পেলো ২০০৪ সালে।
মুক্তির পর একের পর এক প্রশংসা আসতে লাগলো, শুধু তাই নয় আর্ন্তজাতিক ও জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হল সিনেমাটি, তিনি নিজেও পেয়েছিলেন তিনটি জাতীয় পুরস্কার। সময়ের স্রোত পেরিয়ে তিনি এই মুহুর্তে বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা আস্থাভাজন নির্মাতা। বাংলা নাট্যঙ্গনকে সমৃদ্ধ করার পর এখন বাংলা চলচ্চিত্র কে সমৃদ্ধ করছেন, তিনি স্বনামখ্যাত অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ।
বুয়েট থেকে স্থাপত্যকলায় পড়াশোনার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন মঞ্চ নাটকে, সেখান থেকে টিভি নাটক। দেশের তরুন সমাজের মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে নির্মিত নাটক 'ফিরিয়ে দাও অরণ্য' ছিল তার অভিনীত প্রথম নাটক। ইমদাদুল হক মিলনের লেখা নাটক 'যত দূরে যাই'তেও অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন, তবে তুমুল জনপ্রিয়তা পান একই লেখকের সাড়া জাগানো ধারাবাহিক নাটক 'রূপনগর' দিয়ে। এছাড়া বিশ্বাসঘাতক, আড়াল, আশিক সব পারে, ওপারে নিলয়, ছোট ছোট ঢেউ, বীজমন্ত্র- সহ অসংখ্য আলোচিত নাটকে সু-অভিনয়ের জন্য হয়ে উঠেন নব্বই দশকের অন্যতম সেরা টিভি অভিনেতা।

এর পরবর্তী দশকেও তিনি বেশ সমুজ্জ্বল ছিলেন, বিশেষ করে মুরাদ পারভেজের 'দৌড়' ধারাবাহিকে ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন, এছাড়া দিল দরিয়া, ঘুনপোকা, নির্জন স্বাক্ষর, মন+ হৃদয়- অন্যতম। এসময় তিনি জড়িয়ে পড়েন নাটক নির্মানেও, একে একে নির্মান করেন তোমার বসন্ত দিনে, শুকতারা, শঙ্খবাস, স্বর্ণমায়া, গোলাপ কাব্য সহ বেশ সংখ্যক নাটক।এখনও তিনি নাটক নির্মান ও অভিনয়ের সাথে জড়িত আছেন।
নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করা শুরু করেন, প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র তানভীর মোকাম্মেলের 'নদীর নাম মধুমতি'। সেই সময়ের এই নবীন অভিনেতা অনেক দক্ষ অভিনেতাদের মাঝেও প্রশংসিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে একই নির্মাতার 'চিত্রা নদীর পাড়ে', 'লালসালু' ও 'রাবেয়া' সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এছাড়া তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে প্রিয়তমেষু, জালালের গল্প, প্রার্থনা, ফিরে এসো বেহুলা অন্যতম।
এসবের মাঝেই জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্র নির্মানে। তার নির্মিত প্রথম সিনেমা 'জয়যাত্রা'র পর পর নির্মান করেন রূপকথার গল্প ও দারুচিনি দ্বীপ। এর মধ্যে রূপকথার গল্পে তিনি অভিনয় করেছেন। অন্যদিকে বহুল আলোচিত ও প্রশংসিত সিনেমা 'দারুচিনি দ্বীপ' আটটি শাখায় জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। বেশ কয়েক বছর বিরতি দিয়ে নির্মান করেন 'অজ্ঞাতনামা', দর্শক থেকে সমালোচক সবাই এই সিনেমাটির প্রশংসা করেন, বিভিন্ন উৎসবে পুরস্কৃত ও হন। ছবিটি সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় স্বীকৃতি পেয়েছে। এরপর তিনি 'হালদা' সিনেমা বানিয়েছেন নদী ও নারীর মেলবন্ধনে।
বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারে পেয়েছেন পাঁচটি জাতীয় পুরস্কার, জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে না পেলেও নির্মাতা হিসেবে পেয়েছেন একাধিক মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিয়ে করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতকে, এই জুটি টিভি নাটকে বেশ আলোচিত ছিল। বর্তমানে মিডিয়াঙ্গনে এই জুটি সুখী দম্পতি হিসেবে সুপরিচিত। আগামী ১৯শে মার্চ মুক্তি পাচ্ছে তার পরিচালিত ৭ম সিনেমা 'স্ফুলিঙ্গ', এই ছবির বিষয়বস্তু অনুপ্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধ। আশা করি দর্শকরা আবার মুগ্ধ হবেন তার নির্মাণের মুন্সীয়ানায়।
১৯৬৫ সালের আজকের এইদিনে জন্মগ্রহণ করা এই স্বনামধন্য তারকা আজ পেরোচ্ছেন জীবনের ৫৬ টি বছর, রইলো শুভকামনা। শুভ জন্মদিন, তৌকীর আহমেদ!