ভিকি কৌশল কি বলিউডের চিরকালীন ব্যর্থ প্রেমিক?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

ক্যারিয়ারের অর্ধেকেরও বেশি সিনেমায় ভিকি কৌশলের প্রেমজনিত টানাপোড়েন বেশ কৌতূহল জাগানিয়া। বলিউডের মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর, দেশ-বিদেশের এত মেয়ে তার জন্যে পাগল, সেই লোকটিই পর্দায় নিয়মিত ভালোবাসা খুঁজে খুঁজে হয়রান...
ভিকি কৌশলের জন্যে মাঝেমধ্যে মায়াই লাগে। যেমনটা লাগতো বাংলাদেশের বাপ্পারাজের জন্যে। এই দুই মানুষের বাস্তবে জীবন যেমনই হোক, পর্দায় এদের জীবনের বেশ বড়সড় অংশ প্রেম-ভালোবাসাজনিত হাহাকার এবং টানাপোড়েনে কেটে গিয়েছে। শেক্সপিয়ারিয়ান ট্রাজেডির হোলসেল ডিলার হয়েই যেন আবহমানকাল ধরে জ্বাজ্জল্যমান হয়ে রয়েছেন প্রতিবেশি দুই ইন্ডাস্ট্রির দুইজন নায়ক!
বাপ্পারাজকে আজ একটু রেয়াত করি বরং৷ ভিকি কৌশলের জন্মদিনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে, সিনেমার পর্দায় তাঁর প্রেম-ভাগ্যের বিপর্যয়ের উপরেই বরং কলম চালানো যাক। ভিকি'কে 'রাজি' সিনেমায় প্রথম দেখি। এরপর- মাসান। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই দুই সিনেমার একটিতেও তার প্রেম ভাগ্য প্রসন্ন নয়। প্রথম সিনেমাটিতে বউ টেকেনি। দ্বিতীয়টিতে প্রেমিকা। সে সাথে মাসানে দেওয়া সেই ডায়লগ তো বিখ্যাত হয়েই রইলো-
সালা ইয়ে দুখ কায়ে খতম নাহি হোতা বে?
মাসান, রাজি'র প্রসঙ্গে আসবো৷ তার আগে বরং শুরু থেকে শুরু করি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এই পর্যন্ত পর্দার প্রেমে তিনি কতবার দাগা খেয়েছেন, সেটাই জানার চেষ্টা করি বরং।
শুরু করি, 'লাভ শাভ তে চিকেন খুরানা' সিনেমা দিয়ে। ভিকি'র দুর্ভাগ্যের শুরু এই সিনেমা থেকেই৷ যদিও টেকনিক্যালি এই সিনেমায় প্রেমজনিত বিচ্ছেদ দেখানো হয়নি। শেষে গিয়ে নায়কের সাথে নায়িকার মিলনান্তক পরিণতিই দেখানো হয়েছে। তবে, ঘটনা অন্যখানে৷ এই সিনেমায় একই চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুইজন অভিনেতা৷ একজন বড়বেলার চরিত্রে। আরেকজন ছোটবেলার চরিত্রে। নায়কের ছোটবেলার চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তার লাইফ থেকে প্রেমিকা চলে যায়। সেই একই নায়কের বড়বেলার চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তিনি আবার শেষে এসে সেই হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকাকে ফিরে পান। আশা করি, ধরতে পেরেছেন, ছোটবেলার চরিত্রে কোন অভিনেতা অভিনয় করেছেন৷ হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। ভিকি কৌশলই সেই হতভাগ্য মানুষ।
এরপরেই আসবে বিখ্যাত 'মাসান' সিনেমার কথা। অধিকাংশ মানুষই সিনেমাটা দেখে ফেলেছেন। তবুও দীপক আর শালুর গল্পে আরেকটু চোখ পাতি। নীচুজাতের ছেলে দীপকের ভালোবাসা হয় উঁচুজাতের শালুর সাথে। পারিবারিকভাবে মৃতদেহ পোড়ানোর পেশার সাথে জড়িত দীপকের পরিবার। শালুর ভদ্রস্থ পরিবারের সাথে এ পরিবার মিলবেও বা কেন? তবু মিলে যায় দুজন। কিন্তু ভালোবাসা গাঢ় হতে না হতেই এক বাস দূর্ঘটনায় নিহত হয় শালু। আর দীপকের এমনই দুর্ভাগ্য, শালুর মৃতদেহ সৎকারের জন্যে আনা হয় তাদের শ্মশানেই। দীপক অথবা ভিকি কৌশলের আরেকটি ব্যর্থ প্রেমের উপাখ্যান লেখা হয়ে যায় সে সাথে৷

'রমন রাঘব ২.০' সিনেমায় আসা যাক। এখানে ভিকি কৌশল কোনো না কোনোভাবে, ঝগড়াঝাটি, মারামারি করে নিজের প্রেমিকাকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু কথায় আছে- ললাটের লিখন না যায় খণ্ডন! শেষে গিয়ে ঠিকই নিজের প্রেমিকাকে মেরে ফেলেন তিনি। আবারও সেই একই চক্র। বাপ্পারাজ চক্র!
মাঝখানে ভালো কিছু সিনেমার পরে তিনি আসেন 'লাভ পার স্কয়ার ফুট' সিনেমা নিয়ে। এ সিনেমাকেও মোটেও মন্দ বলা যাবে না, কিন্তু মন্দ হচ্ছে- ভিকি কৌশলের ভাগ্য। তার প্রেমজনিত ট্রাজেডি আবার ফিরে আসে এ সিনেমায়। যদিও রোমান্টিক কমেডি ঘরানার এ সিনেমায় শেষে এসে তাকে ট্রাজেডির হাইওয়েতে নামতে হয় না মোটেও। কিন্তু পুরো সিনেমা যদি আমরা লক্ষ্য করি, দেখবো, প্রেমঘটিত নানা দুর্ভোগেই কেটেছে তার পুরোটা সময়। কখনো অফিসের বস, কখনো অফিসের কলিগের প্রেমের নাটকের ফাঁদে পড়ে পর্দার সঞ্জয় (ভিকি কৌশল) তুমুল নাকানিচুবানি খেয়েছেন এই সিনেমাতেও। প্রেমঘটিত ট্রাজেডির ধারাটিও সে সাথে রেখেছেন অক্ষুণ্ণ৷
রাজি'র গল্পও একইরকম৷ দেশপ্রেমিক সেহমত (আলিয়া ভাট) এর সাথে বিয়ে হয় মিলিটারি অফিসার ইকবাল (ভিকি কৌশল) এর। বেচারার এত এত প্রচেষ্টা, যত্ন, চেষ্টাচরিত্রের পরেও সেহমত একদিন দেশের টানে বিশ্বাসঘাতকতা করে স্বামীসহ পুরো শ্বশুরবাড়ির সাথে। সবকিছু বাদ, এখানে একটা জিনিসই দ্রষ্টব্য, ভিকি কৌশলের ভাগ্য!

'সানজু' সিনেমার ক্ষেত্রেও একই গল্প। রনবীর কাপুরের বন্ধু হিসেবে ভালোই সঙ্গ দিলেন তিনি গোটা সিনেমায়। 'কামলি' চরিত্রে অভিনয় করা ভিকি কৌশলের এই সিনেমাতেও একটি প্রেম হলো। তখন তিনি লণ্ডনে। প্রেমিকার টানে বারবার তিনি আসতে লাগলেন ভারতে৷ প্রেমিকার সাথে তার রসায়ন আস্তে আস্তে গাঢ় হবে বলে যখন আশায় হাতের তেলো ঘষটাচ্ছি আমরা, ঠিক তখন আবার বিপত্তি। প্রেমিকা চলে গেলো কামলি'র জীবন থেকে। বোঝা গেলো- ভিকি কৌশলের দুর্দশার চক্র এখনো কাটেনি৷
এরকম হয়েছে আরো সিনেমাতেও৷ লাস্ট স্টোরিজ, মানমারজিয়ান, ভূত... একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বারবার। এমনকী নোরা ফাতেহি'র সাথে একটি মিউজিক ভিডিও আছে তাঁর। অরিজিৎ সিং এর গাওয়া 'পাস্তাওগি' শিরোনামের সেই ভিডিওর একেবারে শেষে এসে প্রেমিকা তাকে ধোঁকা দিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। বুঝুন অবস্থা!
এখন ভিকি কৌশলের সিনেমা দেখলেই ভয়ে থাকি৷ এই রে, আবার হয়তো আরেকটি ব্যর্থ প্রেমের উপাখ্যানের সামনে পড়তে হবে৷ জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন- কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে! কেউ না ভালোবাসলেও ভিকি কৌশল ভালোবাসেন। এ কারণেই হয়তো এরকম স্ক্রিপ্টকেই বেছে নেন তিবি বারবার।
'ভাঙ্গো বাপ্পারাজ চক্র' মতবাদে অনুপ্রানিত হয়ে বাস্তব জীবনের মতন পর্দায়ও মাখোমাখো রসায়ন নিয়ে হাজির হবেন তিনি, এই জন্মদিনে এটা হওয়া উচিত তার একমাত্র প্রতিজ্ঞা। তাতে তাঁর ভক্তরাই সবচেয়ে বেশি স্বস্তি পাবে। বলিউডের মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর হয়েও ক্যারিয়ারের অর্ধেকের বেশি সিনেমাতে যদি প্রেমজনিত হাহাকারের 'বিষাদসিন্ধু'তে নিমজ্জিত হতে হয় তাকে, তাহলে তা ভয়ঙ্কর প্রকট সমস্যা, ঘোরতর অন্যায়। আশা করি, এ বিষয়ে তিনি নজর রাখবেন। সে সাথে অপূর্ণ সম্পর্কের গল্প দিয়ে ভক্তদেরও আর নিরাশ করবেন না, আশা রাখি সেটাও।
তথ্যসূত্র: ফিল্ম কম্প্যানিয়ন