সৃজিতের জুলফিকার: হতে পারতো অসাধারণ কিছু, হয়েছে আফসোসের আরেক নাম!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর এলাকা, ডক এলাকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গের আন্ডারওয়ার্ল্ডের চিত্রটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা- তবুও সৃজিতের ফিল্মোগ্রাফিতে জুলফিকার বেশ বড়সড় একটা আফসোসের নাম। অনেক কিছু হতে পারতো, যা হয়নি। সেই ২০১৬ সালে ওটিটি ছিল না। এই কাস্ট, এই পরিচালক দিয়েই যদি আট পর্বের একটা সিরিজ করা যেতো, 'জুলফিকার' অসাধারণ কিছু হতেও পারতো...
আজ সৃজিত মুখার্জির জন্মদিন। অনলাইনে তাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথাই লিখছে। চমৎকার সূচনা দিয়ে আশা জাগিয়ে সৃজিত আমাদের শেষ কয়েক বছরে হতাশ করেছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। তার কাজের ধারা দেখে মনে হচ্ছে কাজটা তিনি চালিয়ে যাবেন। সে যাই হোক, সৃজিতের রিমেকের সামনে সত্যিকার অর্থে তার মৌলিক কাজগুলো ভালো। সবাই একথা বলে থাকে কিন্তু মৌলিকের মধ্যেও 'জুলফিকার' সম্ভবত সবচেয়ে সমালোচিত। প্রায় কেউই পছন্দ করেনি।
মজার ব্যপার হলো ২০১৬ সালে এই সিনেমাটা নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী ছিলাম। আগ্রহী ছিলাম। পশ্চিমবঙ্গে থাকলে হয়ত হলে গিয়ে প্রথম দিনের প্রথম শো ধরতে চাইতাম। ট্রেলার কাটটা আগ্রহ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সিনেমা দেখার পর নিজেও যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছি। প্রথমত, দুটো নাটক মিলিয়ে একটা কাজ যা দেওয়া হলো সেখানে ঠিকঠাক কিছুই প্রতিষ্ঠা করা গেল না। কিন্তু এখানেও কিছু দারুণ ব্যপার আছে।
প্রথমত, গানগুলোর কথা না বললেই না। আজ অবদি প্রায় প্রতিটা গান প্রিয় হয়ে আছে। দ্বিতীয়ত, চরিত্রায়ন। সিজারকে জুলফিকার, ক্লিয়পেট্রাকে তলাপাত্র, লেপাইডাসকে লাল্টু দাস করার কথাই কেবল বলছি না, তৎকালীন রোমান শাসন সম্পর্কে কারও ধারণা থাকলে সেখানকার গণতান্ত্রিক অবস্থা জানার কথা। পশ্চিমবঙ্গের আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রেক্ষাপটে সেটাকে 'সিন্ডিকেট' দিয়ে রিপ্রেজেন্ট করার আইডিয়াটা চমৎকার।
পাশাপাশি টালিগঞ্জের সিনেমায় বানোয়াট আন্ডারওয়ার্ল্ড দেখে বিরক্তি ধরে গেছিল সেখানে ওই ডক এলাকার রাজনীতিটা আসলেই চমকপ্রদ। গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর এলাকা, এখানকার মুসলিম কমিউনিটির সম্পর্কে কারও জানা থাকলে বিষয়টা বুঝবেন। এখানে সত্যিকার অর্থেই জাতীয় সঙ্গীত আর পতাকা বাদে আলাদা একটা ভারত আছে।
শেক্সপিয়ারকে রূপান্তর করা খুব কঠিন কাজ। বিশাল ভরদ্বাজ যেভাবে শেক্সপিয়ারকে আর ঋতুপর্ন যেভাবে রবীন্দ্রনাথকে গুলে খেয়েছেন, সৃজিতের কাছ থেকে তা আশা করি না। কিন্তু এখানে শেক্সপিয়ারের অন্যতম অনুষঙ্গ যে মৃত্যুর পড়ে মানুষের আত্মার ফিরে আসা, সেটাও জুলফিকারের মৃত্যুর পর বশিরের হ্যালুসিনেশনের মধ্যে ভালোই এসেছে। আর শেক্সপিয়ারের চরিত্রকে অ্যাডাপ্ট করা কতটা হয়েছে সে প্রসঙ্গে না গিয়েও বলা যায় সৃজিত যাদেরকে যেভাবে এনেছেন, তারা সেটুকু খারাপ করেননি, একমাত্র পরমব্রত বাদে।
তবে বশির চরিত্রে কৌশিক সেনের কণ্ঠ মোটা করার অপচেষ্টা না করলেও হতো। আর হ্যাঁ, ক্যাসিয়াস চরিত্রে যীশু সেনগুপ্তকে যেভাবে আনা হয়েছে সেটা অভাবনীয়। ঋতুপর্নর যীশু যে নরম সরম অভিনয় করে এক কোণে পড়েছিলেন, সেই যীশুর ক্যারিয়ার যে অনেকখানি বদলে গেছিল সেটা লক্ষণীয়।
জুলফিকার আমার বেশ বড়সড় একটা আফসোস। অনেক কিছু হতে পারতো, যা হয়নি। দোষটা অনেকটাই সৃজিতের হলেও পুরোপুরি না। সিনেমার চার ঘণ্টা ব্যপ্তি দেওয়া সম্ভব ছিল না কিন্তু এই গল্প অন্তত অতোটুকু সময় দাবী করে। সেই ২০১৬ সালে ওটিটি ছিল না। এই কাস্ট, এই পরিচালক দিয়েই যদি আট পর্বের একটা সিরিজ করা যেতো, 'জুলফিকার' অসাধারণ কিছু হওয়া সম্ভব ছিল।